স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী সিন্ডিকেটের মূলহোতা টেকনাফের নূর মোহাম্মদ ও উখিয়া জাফর মাঝি সহ ৫ জন র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হওয়ার পর ইয়াবা বানিজ্য সাময়িক স্থগিত হলেও গত কয়েক মাস ধরে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ গড়ফাদার চক্রের উত্তরসূরী ইয়াবা সিন্ডিকেট। গত ২৩ সেপ্টেম্বর হ্নীলা থেকে বিলাসবহুল নোহা গাড়ী যোগে চট্টগ্রামে পাচার হওয়ার সময় খুনিয়াপালং এলাকায় ২৫ লক্ষ টাকা মূল্যের ইয়াবা লুটপাটের ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাত ৯ টার দিকে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফে কোষ্টগার্ডের সদস্যরা বঙ্গোপসাগরের নাফনদীর মোহনায় একটি ফিশিং বোটে তল্লাসী চালিয়ে প্রায় ৯ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে, যার আনুমানিক মুল্য ৪৫ কোটি টাকা বলে কোস্টগার্ডের টেকনাফ স্টেশন কামান্ডার লে. কর্ণেল নাফিউর রহমান নিশ্চিত করেছেন।
সূত্রে জানা গেছে, সড়ক পথে র্যাব, বিজিবি, পুলিশ, হাইওয়ে ও ডিবি পুলিশ ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে কড়াকড়ি আরোপ করার কারণে টেকনাফের হ্নীলা আইলা খালি হয়ে এখন সমুদ্র পথে ফিশিং ট্রলার যোগে প্রতিনিয়ত পাচার হচ্ছে মোটা অংকের ইয়াবার চালান। এছাড়াও মেরিন ড্রাইভ সড়ক পথে প্রতিদিনই পাচার হচ্ছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা। সম্প্রতি ইয়াবা পাচারকালে টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কের ইনানী এলাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় নারী ইয়াবা পাচারকারীসহ তিনজন ঘটনাস্থলে নিহত হয়।এ ঘটনায় উখিয়া থানায় মামলাও হয়েছে। হ্নীলা, বালুখালী ও উখিয়া ভিত্তিক চিন্থিত সংঘবদ্ধ ইয়াবা পাচারকারীদের ধরতে পুলিশ বিশেষ অভিযানে নামছে বলে থানা সূত্রে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে,২০১৪ সালে র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত নুর মোহাম্মদের ভাই নুরুল হুদা, নুর মোহাম্মদের স্ত্রী মিনারা বেগম তার মেয়ে সেলিনা আকতার সেলি ও ছেলে নুরুল আমিন ফাহিম সহ ৯ জনের সিন্ডিকেট টেকনাফে ইয়াবার অন্যতম গড়ফাদার সিন্ডিকেট হিসেবে পরিচিতি রয়েছে।পড়ালেখার নাম ভাঙ্গিয়ে নুরুল আমিন ফাহিম চট্টগ্রামে অবস্থান করে আনোয়ারা ঘাট থেকে ইয়াবার চালান সংগ্রহ করে চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন ইয়াবা পাচারকারীদের নগদ টাকায় লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। গত মঙ্গলাবার রাতে কোষ্টগার্ড সদস্যরা নাফনদীর মোহনায় ফিশিং ট্রলার থেকে যে ৯ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে এটি তার অংশ বিশেষ মাত্র। সুত্র জানায় ,২০১৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রায় ৩৬ হাজার ইয়াবা ও ৪৮ লক্ষ নগদ টাকা সহ র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত নুর মোহাম্মদের মেয়ে সেলিনা আকতার সেলি চট্টগ্রামের শীতল ঝর্ণা এলাকায় বায়োজিদ বোস্তামী থানা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। এসময় তার সাথে আরো ৩ জন পাচারকারী ছিল বলে জানা গেছে। র্যাবের সাথে বন্দুক যুদ্ধে নিহত নুর মোহাম্মদের প্রথম স্ত্রী রোহিঙ্গা নারী মিনারা আকতার ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী ৫০ হাজার ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে লেদা বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় পৌঁছলে র্যাব সদস্যরা তাকে হাতে নাতে আটক করে। এসময় তার নিকট থেকে ৩৭ হাজার নগদ টাকা সহ ৫০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। এদিকে সম্প্রতি টেকনাফের হ্নীলা এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে আধিপাত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে। টেকনাফ উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর জানান, বিভিন্ন সময়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অবৈধ অস্ত্রের মহড়ায় এলাকার সাধারণ মানুষ আতংকিত হয়ে পড়েছে। টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আব্দুল মজিদ জানান, নুর মোহাম্মদ বন্দুক যুদ্ধে মারা যাওয়ার পরও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ইয়াবা পাচার ছাড়েনি। তিনি বলেন, তার ভাই নুরুল হুদার বিরুদ্ধে ইয়াবা পাচার, খুন, মানব পাচার ও অস্ত্র লুটসহ প্রায় ১২টি মামলা রয়েছে।
সড়ক ও সাগর পথে সমান তালে ইয়াবা পাচার অপ্রতিরোধ্য হওয়ার ঘটনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উখিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, ইয়াবা এখন উখিয়া টেকনাফের অন্যতম বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। যা নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখের ঘুম হারাম হয়ে গেলেও পাচার থেমে নেই। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আবুল খায়ের জানান, সড়ক পথে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর থাকলেও অতিশীঘ্রই বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে। এসময় পালিয়ে থাকা বিভিন্ন মামলার আসামীসহ তালিকাভুক্ত মানবপাচারকারী ও ইয়াবা পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পাঠকের মতামত: